উদ্যোক্তাদের জন্য টিপস

উদ্যোক্তাদের জন্য শার্ক ট্যাংকের কেভিন ও’লিয়ারির টিপস!

কেভিন ও’লিয়ারি বেশির ভাগ মানুষ চিনেন শার্ক ট্যাংকের মাধ্যমে। এই মানুষটার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা ব্যাপক। স্টিভ জবসের মতো খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বদের সঙ্গেও কাজ করার রেকর্ড রয়েছে তার।

আর নিত্যনতুন উদ্যোক্তাদের সঙ্গেও তাকে প্রায়ই কাজ করতে দেখা যায়। তাদের প্রতিষ্ঠানেও তিনি হরহামেশাই বিনিয়োগ করেন। এবার এই কেভিন ও’লিয়ারি তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বেশ কিছু টিপস দিয়েছেন। তার মতে, সফল হওয়ার জন্য এই কাজগুলো একজন তরুণ উদ্যোক্তার অবশ্যই করা উচিত।

তো চলুন একে একে দেখে নেই ঠিক কী পরামর্শ দিয়েছেন তিনি-

১. শুরুতে ২৪ মাস বিনিয়োগ করুন

আপনি যে ব্যবসা শুরু করতে চাইছেন, সেটিতে আগেই হাত দিবেন না। প্রথমে ওই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানে একটি চাকরি নিন। সেখানে অন্তত ২৪ মাস, মানে ২ বছর চাকরি করুন। এমনকি তারা যদি আপনাকে এই চাকরির জন্য কোনো টাকাপয়সা বা বেতন না-ও দেয়, তা-ও চাকরি করুন। প্রয়োজনে ইন্টার্নশিপ নিন।

এতে করে আপনার ওই ব্যবসার কাঠামো সম্পর্কে একটা ধারণা হয়ে যাবে। আপনি সহজেই ব্যবসার বেজলাইনটা ধরতে পারবেন। আপনি বুঝতে পারবেন পুরো ইন্ডাস্ট্রিটা কীভাবে চলে। একেবারে সবকিছু আপনার নখদর্পণে না আসলেও মৌলিক ধারণাটা স্পষ্ট হয়ে যাবে।

এই দুই বছর আপনাকে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভুল করার হাত থেকে বাঁচিয়ে দেবে। আপনার ভুলের পেছনে সময় নষ্ট কম হবে। আর যেহেতু আপনার ঝুলিতে কিছুটা অভিজ্ঞতা রয়েছে, আপনি সহজেই সঠিক পদক্ষেপগুলো নিতে পারবেন। কেভিন ও’ল্যারি মনে করেন, তরুণ উদ্যোক্তাদের এ কাজটা করা খুবই জরুরি।

২. বিনিয়োগের অর্থ যেভাবে সংগ্রহ করবেন

২৪ মাস অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা শেষ? এখন আপনার ব্যবসা শুরু করার পালা। কিন্তু বিনিয়োগের অর্থ কীভাবে সংগ্রহ করবেন?

শুরুতেই ব্যাংক লোনের বদলে বিনিয়োগের অর্থটা ধার হিসেবে সংগ্রহ করুন পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে এবং অল্প দিয়ে শুরু করুন। কারণ আপনার ঝুলিতে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা থাকলেও আপনি কিন্তু ঝুঁকিমুক্ত নন। আপনার ব্যবসা দাঁড়াতে সময় লাগতে পারে।

কেভিন ও’লিয়ারি বলছেন, পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে দশ হাজার ডলার সংগ্রহ করে ব্যবসায় নামতে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই অঙ্কটা ধরুন ৩ থেকে ৫ থেকে লাখ। মোট কথা এমন একটা অংক হতে হবে যা আপনার ব্যবসা শুরুর জন্য যথেষ্ট হয়, আবার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকেও নিতে কষ্ট না হয়। আর কোনো কারণে যদি ব্যবসা ডুবেও যায়, আপনি যাতে তা পরিশোধ করে দেওয়ার মতো সক্ষমতা রাখতে পারেন।

৩. ব্যর্থ হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিন

আপনার সংশ্লিষ্ট ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে জ্ঞান আছে এবং আপনার হাতে ব্যবসা শুরু করার মতো অর্থও আছে। তারপরও রাতারাতি সফল হওয়ার আশা করবেন না। চেষ্টা করুন সফল হওয়ার, কিন্তু ব্যর্থতা যে আসতে পারে সে বিষয়ে প্রস্তত থাকুন। ব্যর্থতা এসে কড়া নাড়বেই। অন্তত কেভিন ও’লিয়ারি তাই মনে করেন।

তার মতে, ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা ও বিনিয়োগের অর্থ থাকাটাই যথেষ্ট না। এগুলো আপনার সফল হওয়ার সম্ভাব্যতা বৃদ্ধি করে মাত্র। এমন অনেক কিছুই হয় যা আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ফলে এগুলো থাকা স্বত্ত্বেও ব্যর্থতার মুখোমুখি হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না।

কেভিন ও’লিয়ারি বলেন, ব্যবসায় নামার পর কয়েক বছর ব্যর্থ হবেন, এটা একরকম ধরে নিন। এটার গুরুত্ব রয়েছে।

তবে কেউ যদি ব্যর্থতা থেকে শেখা জ্ঞানগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে, তাহলে সে সফল হবেই।

৪. নজর দিন আত্মবিশ্বাস, পোশাক, বাচন ভঙ্গিতে

যে কোনো ব্যবসাতেই আপনাকে অনেকের সঙ্গে কথা বলতে হবে, যোগাযোগ রাখতে হবে। অনেক সময় বাজারে একই খাতে ব্যবসা করছেন এমন অন্যান্য ব্যবসায়ীর কাছেও আপনাকে যেতে হবে।

এসব ক্ষেত্রে আপনি কী ধরনের পোশাক পরছেন, কীভাবে কথা বলছেন, সে বিষয়গুলো গুরুত্ব বহন করে। আপনি যদি আত্মবিশ্বাসী না হন, তাহলে তা আপনার কথা ও আচরণে তা ফুঁটে উঠবে। আবার আপনি যদি অতি আত্মবিশ্বাসী হন, সেটিও আপনার কোনো কাজে আসবে না। অন্যান্যরা ঠিকই বুঝে যাবে এবং আপনি সঠিক মূল্যায়নটি পাবেন না।

তাহলে এক্ষেত্রে উপায়? উপায় হলো- আত্মবিশ্বাস, পোশাক ও কথাবার্তা সম্পর্কে সচেতন থাকা।

ও’লিয়ারি বলেন, আপনার মধ্যে যদি সফল উদ্যোক্তা হওয়ার আত্মবিশ্বাস থাকে, তাহলে আপনি একটা শব্দ উচ্চারণ করার আগেই তা ফুঁটে উঠবে। আপনার আই কন্ট্যাক্ট, চলাফেরা সবকিছু তা জানান দেবে। আপনি কীভাবে দাঁড়াচ্ছেন, কী পোশাক পরছেন, কীভাবে নিজেকে অন্যদের সামনে তুলে ধরছেন – সবকিছুই এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

ফলে আপনি যদি এটি না করতে পারেন, তাহলে আপনার ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাবে। স্বস্তির ব্যাপার হলো – আপনি যা করছেন, সে বিষয়ে যদি আপনার জ্ঞান থাকে, নিজের পণ্য বা সেবার ওপর আস্থা থাকে, তাহলে আত্মবিশ্বাস স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আপনার মধ্যে চলে আসবে।

তথ্যসূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, দ্য ডায়েরি অফ আ সিইও

আপনার যদি এ লেখাটা ভালো লেগে থাকে, তাহলে উইজ বাল্ব বুকমার্ক করে রাখুন। এরকম অভিনব ও নিত্যনতুন লেখা প্রায়ই পাবেন। আপাতত কষ্ট করে একটু ঢুঁ দিয়ে যেতে হবে সাইটে। চেষ্টা করছি নিউজলেটার অপশনও নিয়ে আসতে। সেটা চলে এলে সরাসরি আপনার মেইলেই চলে যাবে নতুন লেখা।