বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং শুধু একটি পেশা নয়—অনেকের কাছে এটি একমাত্র আয়ের পথ, আবার কারও কাছে বাড়তি উপার্জনের সুযোগ। বাংলাদেশে তরুণদের মাঝে ফাইভার (Fiverr) একটি জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস হয়ে উঠেছে। তবে এ প্ল্যাটফর্মে প্রতিযোগিতা তীব্র, তাই শুধু অ্যাকাউন্ট খুলে বসে থাকলে কাজ মিলবে না। প্রয়োজন স্মার্ট পরিকল্পনা ও ধারাবাহিক প্রচেষ্টা। চলুন জেনে নিই, কীভাবে আপনি ফাইভার-এ প্রথম লিড বা ক্লায়েন্ট পেতে পারেন, এবং কীভাবে সফল হতে পারেন।
১. প্রোফাইল গুছিয়ে তুলুন, আপনার পরিচয়ই আপনার পুঁজি
একজন ক্লায়েন্ট প্রথমেই যেটা দেখে সেটি হচ্ছে আপনার প্রোফাইল। তাই প্রোফাইলটিকে হতে হবে পেশাদার, পরিষ্কার ও আকর্ষণীয়। নিজের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং আগ্রহের জায়গাগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন। নিজের একটি সুন্দর প্রোফাইল ছবি এবং সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দিন, যা আপনার পেশাগত মানসিকতা তুলে ধরে।
একটি ভালো প্রোফাইল হলো সেই দরজা, যেটা খুলে ক্লায়েন্ট আপনার গিগে ঢুকবেন।
২. নির্দিষ্ট নিশ (niche) বেছে নিন
ফাইভার-এ হাজারো মানুষ লোগো ডিজাইন, কন্টেন্ট রাইটিং বা ওয়েব ডিজাইনের মতো সার্ভিস দিচ্ছেন। আপনি যদি এমন কোনো বিশেষায়িত সার্ভিস দেন—যেমন, Only Amazon A+ Content Design অথবা Shopify Dropshipping Product Description—তাহলে আপনার গিগ হাজার জনের মাঝে আলাদা হয়ে উঠবে।
নিশ নির্বাচন মানে নিজেকে একটি নির্দিষ্ট সমস্যার এক্সপার্ট হিসেবে উপস্থাপন করা। এতে ক্লায়েন্টরাও দ্রুত বিশ্বাস করতে পারেন।
৩. প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নির্ধারণ করুন
শুরুতে আপনি নতুন, তাই শুরুটা করতে হবে একটু স্মার্টভাবে। আপনি যদি শুরুতেই অতিরিক্ত দাম চান, ক্লায়েন্ট সহজে আগ্রহী হবে না। বরং এমন মূল্য নির্ধারণ করুন যাতে তারা একবার অন্তত আপনাকে কাজ দিয়ে দেখে। একবার যদি ভালো রিভিউ পেয়ে যান, তখন ধীরে ধীরে নিজের দাম বাড়াতে পারবেন।
৪. চমকপ্রদ ভিজ্যুয়াল ব্যবহার করুন
গিগের থাম্বনেইল, ভিডিও বা স্লাইড—সবই ফাইভার-এ গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ প্রথমে দেখেই সিদ্ধান্ত নেয় ক্লিক করবে কিনা। আপনার কাজের নমুনাগুলোকে এমনভাবে উপস্থাপন করুন যাতে সেটি পেশাদার ও চোখে লাগার মতো হয়।
আপনি যদি ভিডিও যোগ করেন, তাহলে সেখানে নিজেকে সংক্ষেপে পরিচয় দিন, কী সার্ভিস দিচ্ছেন তা ব্যাখ্যা করুন। বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে।
৫. গিগের বর্ণনায় পরিষ্কারভাবে বলুন আপনি কী দিচ্ছেন
গিগ ডেসক্রিপশন যেন হয় স্পষ্ট, সাবলীল লেখা এবং ক্লায়েন্টের বোঝার জন্য সুবিধাজনক। আপনি কী সার্ভিস দিচ্ছেন, ক্লায়েন্ট কী পাবে, এবং সময়মতো কীভাবে ডেলিভারি দেবেন—এসব বিষয় স্পষ্টভাবে লিখুন। ভুলভাল ইংরেজি নয়, বরং সংক্ষিপ্ত, প্রফেশনাল এবং ক্লায়েন্টের ভাষায় লেখাই শ্রেয়। প্রয়োজনে অনলাইন টুল ব্যবহার করুন। কিন্তু চেষ্টা করুন মানসম্পন্ন ডেসক্রিপশন দেওয়ার।
৬. অতিরিক্ত সুবিধা যুক্ত করুন
ফাইভার-এ একেকটি গিগে “Extras” বা অতিরিক্ত অপশন থাকে। যেমন: দ্রুত ডেলিভারি, আরেকটি কাস্টমাইজড ডিজাইন বা অতিরিক্ত রিভিশন। এই এক্সট্রাগুলো আপনার গিগকে আকর্ষণীয় করে তোলে। অনেক ক্লায়েন্ট একটু বেশি টাকা দিয়ে হলেও দ্রুত ডেলিভারি চান—আপনি সেটার সুযোগ নিতে পারেন। ফলে আপনার সুবিধামতো অতিরিক্ত সুবিধা যোগ করুন।
৭. সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের গিগ শেয়ার করুন
শুধু ফাইভার-এ বসে থাকলে চলবে না। নিজের গিগ লিংক ফেসবুক, লিংকডইন, এক্স (টুইটার) বা ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করুন। বিশেষ করে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং গ্রুপে নিজের কাজের নমুনা দিয়ে গিগ লিংক দিন। এতে নতুন ক্লায়েন্ট পাওয়ার সুযোগ বাড়ে।
৮. দ্রুত ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করুন
ধরুন, কেউ আপনার গিগে আগ্রহ দেখিয়ে মেসেজ দিলো। এখন আপনি যদি ২৪ ঘণ্টা পর রিপ্লাই দেন, সে ক্লায়েন্ট চলে যেতে পারে অন্য কারও কাছে। তাই ফাইভার অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে নিয়মিত চোখ রাখুন, মেসেজ পেলেই রিপ্লাই দিন। চেষ্টা করুন যতো দ্রুত সম্ভব তার সাথে কথা বলার।
এটা কেবল পেশাদারিত্বের নিদর্শনই নয়, ফাইভারের অ্যালগরিদমও দ্রুত রিপ্লাই দেওয়া প্রোফাইলকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
৯. এমন কাজ দিন, যাতে ক্লায়েন্ট অবাক হয়
আপনার কাজ এমন মানসম্পন্ন হতে হবে যাতে ক্লায়েন্ট শুধু খুশি নয়, বরং পরের বারও যাতে আপনাকেই খোঁজে। সময়মতো, নিখুঁত এবং চাহিদা অনুযায়ী কাজ দিলে ক্লায়েন্ট হয়তো টিপসও দিয়ে দেবেন, আর বড় কাজের অফারও দিতে পারেন।
১০. রিভিউ চাইতে ভয় পাবেন না
অনেকেই রিভিউ চাইতে ভয় পান। অনেকে আবার মনে করেন এটি একেবারেই অনুচিত। তবে আপনি কাজ ডেলিভারি দেয়ার পর যদি ক্লায়েন্ট খুশি হন, তখন ভদ্রভাবে একটি রিভিউ চাইতে পারেন। ফাইভার-এ রিভিউ মানেই হলো পরবর্তী ক্লায়েন্টের কাছে আপনার প্রতি বিশ্বাস তৈরি হওয়া। তবে জোর করে নয়—নম্রভাবে এবং শিষ্টাচার মেনে অনুরোধ করতে হবে।
পরিশেষে
ফাইভার-এ সফল হতে হলে ধৈর্য, মানসম্পন্ন কাজ এবং নিয়মিত যোগাযোগের বিকল্প নেই। শুধু কাজ পাওয়ার জন্য না, বরং নিজের প্রতিটি প্রজেক্টকে ব্র্যান্ড হিসেবে ভাবুন। ক্লায়েন্টকে শুধু খুশি নয়, মুগ্ধ করতে পারলেই আপনি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হয়ে উঠবেন।
আজই শুরু করুন। আপনার প্রথম লিড হয়তো আপনার প্রোফাইলেই অপেক্ষা করছে।
উইজ বাল্বের জন্য লেখাটি লিখেছেন: জুলফিকার নিয়াজ
আপনার যদি এ লেখাটা ভালো লেগে থাকে, তাহলে উইজ বাল্ব বুকমার্ক করে রাখুন। এরকম অভিনব ও নিত্যনতুন লেখা প্রায়ই পাবেন। আপাতত কষ্ট করে একটু ঢুঁ দিয়ে যেতে হবে সাইটে। চেষ্টা করছি নিউজলেটার অপশনও নিয়ে আসতে। সেটা চলে এলে সরাসরি আপনার মেইলেই চলে যাবে নতুন লেখা।