২০২৫ সালের জুন মাসের শুরুটা ইতিহাসে বিশেষভাবে জায়গা করে নেবে। এ সময়টিতেই মার্কিন শতকোটিপতি ইলন মাস্ক ও দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি হয়।
এই ঘটনাটা যে ঘটবে, তা কয়েকদিন আগেও অকল্পনীয় ছিল। কারো মাথাতেই হয়তো আসেনি দু’জন বিতণ্ডায় জড়াবে। আর আসবেই বা কেন? ইলন মাস্ক নিজেই তো প্রচুর আর্থিক সহায়তা দিয়ে ট্রাম্পকে নির্বাচনে জিততে সহায়তা করেছিল।
দিনশেষে ট্রাম্পও সেটির প্রতিদান দিয়েছিলেন। ইলনকে জায়গা দিয়েছিলেন প্রশাসনে। ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি নামে নতুন একটা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করতে দিয়েছিলেন। যে বিভাগের লক্ষ্যই ছিল মার্কিন সরকারের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো। ইলন ওই বিভাগের হয়ে প্রচুর সরকারি কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুতও করেছিল।
এমনকি মাস্কের এসব কর্মকাণ্ডে যখন তার প্রতিষ্ঠান টেসলার শেয়ার দর পড়তে শুরু করে, তখন ট্রাম্পই এগিয়ে এসেছিলেন তার সহায়তায়। হোয়াইট হাউস প্রাঙ্গনে ইলন টেসলার একাধিক গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। আর সেগুলোর মধ্যে থেকে একটি বেছে নিয়েছিলেন ট্রাম্প। উদারকণ্ঠে সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট সমর্থকদেরকে টেসলার পাশে দাঁড়ানোরও আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ফলে ট্রাম্প-ইলনের এই মধুর সম্পর্ক যে এতোটা বাজে অবস্থায় আসবে তা সাধারণের মাথায় না আসারই কথা। মজার ব্যাপার হলো – এরকমটি যে হবে বা হতে পারে, সেটির আভাস কিন্তু ২০২৫ সালের মে মাসের মাঝামাঝি থেকেও পাওয়া যাচ্ছিল।
আপনাকে আরও একটি মজার তথ্য দেই। যে ট্রাম্পের সঙ্গে ইলনের এতো মধুর সম্পর্ক ছিল, যাকে ইলন মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে নির্বাচনে জিতিয়ে এনেছিলেন, সে-ই ইলন কিন্তু শুরুতে ট্রাম্পকে সমর্থনও করতেন না। তিনি ছিলেন ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী দল – ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থক ও ভোটার। তিনি প্রকাশ্যেই সমালোচনা করতেন ট্রাম্পের। সেখান থেকে ট্রাম্পের সমর্থক হওয়া, তার পেছনে কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচ করা, তার আস্থাভাজন হয়ে দিনশেষে আবারও বিরাগভাজন হওয়ার পুরো যাত্রাটাকে আসলে নাটকীয় বললেও কম হবে।
চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক কীভাবে ইলন ট্রাম্পের সমর্থক হলেন, কেন তিনি তাকে শুরুতে পছন্দ করতেন না, আর কী নিয়েই আবার সমস্যা শুরু হলো দু’জনের মধ্যে-
ট্রাম্প বিরোধী ইলন
ইলন মাস্কের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখান থেকে ৯০ এর দশকে তিনি প্রথমে কানাডায় ও পরে যুক্তরাষ্ট্রের আসেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করে প্রতিষ্ঠিত হন। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইলন মাস্কের শুরুতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে সমর্থন দেওয়াটাই আসলে যৌক্তিক। কারণ এই দলটিই মূলত অভিবাসন ও অভিবাসীদের বিষয়ে উদার। অন্যদিকে রিপাবলিকান পার্টি বরাবরই রক্ষণশীল।
ইলন যখন ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে সমর্থন করা শুরু করেন, তখনও ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির হয়ে রাজনীতিতে আসেননি। তিনি আসেন আরও পড়ে ২০১৬ সালে। ট্রাম্পের সঙ্গে সেবার নির্বাচনী প্রচারের সময়টিতেই ইলন মাস্কের কথাবার্তা হয় এবং তিনি ট্রাম্পকে পছন্দ করতে পারেননি।
ওই সময় সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেছিলেন, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সঠিক ব্যক্তি নন। তিনি আরও বলেছিলেন, ট্রাম্পের ওই ধরনের ব্যক্তিত্বই নেই যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভালো কিছু নিয়ে আসতে পারে।
ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক
এদিকে আবার ইলন মাস্কের ঘনিষ্ঠ ও তার প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সে বিনিয়োগকারী পিটার থিয়েল ট্রাম্পের সমর্থক ছিলেন। থিয়েল নিজেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জগতের যথেষ্ট ক্ষমতাধর ব্যক্তি। ফলে তার আহ্বানে ইলন মাস্ককে ট্রাম্প সমর্পর্কে কিছুটা নমনীয় হতে হয়। ২০১৬ সালে ট্রাম্প যখন প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তখন নিউ ইয়র্কে তিনি প্রযুক্তি জগতের রথী মহারথীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সেখানে মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলা, অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক, গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ, অ্যামাজনের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস উপস্থিত ছিলেন। বলাবাহুল্য যে সেখানে ইলনও উপস্থিত হন। তাকে রীতিমতো দাওয়াত দিয়েই নিয়ে যান ট্রাম্প। এই সাক্ষাতের ঘটনাটি ঘটে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে।
সবার সঙ্গে সাক্ষাতের পর একাকি ইলন মাস্কের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। সে বৈঠকে দুজনের মধ্যে কিছু কথাবার্তা হয়। ইলন মাস্কের কাছে ট্রাম্পকে ‘পাগলাটে ধরনের’ ব্যক্তি বলে মনে হয়। এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে ওয়াল্টার আইজ্যাকসনের লেখা ‘ইলন মাস্ক’ বইটিতে।
যা-ই হোক ওই বৈঠকের পর ট্রাম্প সিএনবিসিকে জানান যে মাস্ককে তার ভালো লেগেছে। অন্যদিকে মাস্কেরও সুর কিছুটা নরম শোনা যায়। এর কয়েকদিন পরেই শুরু হয়ে যায় ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ। ট্রাম্প একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন এবং উপদেষ্টা পরিষদে যোগ দেন ইলন মাস্ক। অবশ্য কয়েক মাসের মধ্যেই উপদেষ্টা পরিষদ থেকে তিনি বের হয়ে আসেন। আর এর পেছনে অন্যতম ভূমিকা রাখে ট্রাম্পের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার বিষয়টি।
ইলন মাস্ক ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি। ২০১৭ সালে এক টুইটে তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন বাস্তব সমস্যা। প্যারিস চুক্তি থেকে বের হয়ে আসা আমেরিকা বা বিশ্বের জন্য ভালো কিছু নয়।’ তবে মাস্কের এই বের হয়ে আসা সরকারের সঙ্গে তার প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলেনি। স্পেসএক্স ওই সময় শত শত কোটি ডলারের চুক্তি পেয়েছে নাসা ও অন্যান্য মার্কিন সরকারি সংস্থার কাছ থেকে।
ট্রাম্প ২০২০ সালেও ইলন মাস্কের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইলন আমাদের দেশের বুদ্ধিদ্দীপ্ত মানুষগুলোর একজন।’ এদিকে, ২০২২ সালে এসে ইলন মাস্কের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে।
ডেমোক্র্যাটদের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার
২০২২ সালের মে মাসে মাস্ক জানান, তিনি ডেমোক্র্যাটদের প্রতি তার সমর্থন প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। কারণ দলটি এখন বিদ্বেষ ও বিভক্তির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এক টুইট বার্তায় তিনি প্রকাশ্যেই জানিয়ে দেন যে আর ডেমোক্র্যাটদের নয়, এখন থেকে রিপাবলিকানদের ভোট দিবেন। অবশ্য মাস্ক সেটি কথার কথা বলেছিলেন। ২০২০ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকেই ভোট দিয়েছিলেন। তখন পর্যন্ত ট্রাম্পের ওপর আস্থা পাচ্ছিলেন না তিনি।
২০২২ সালের জুলাই নাগাদ ট্রাম্প ও ইলনের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। সে সময় এক রাজনৈতিক সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, ইলন মানুষকে ভুল বুঝাচ্ছে। তার প্রতিষ্ঠান সরকারি সমর্থন না পেলে মূল্যহীন হয়ে পড়বে। অন্যদিকে মাস্কও সাফ জানিয়ে দেন, ট্রাম্পের আবার নির্বাচন করা উচিত নয় বলেই মনে করেন তিনি।
তবে ট্রাম্পের প্রতি বিরূপ হলেও ইলন মাস্ক কিছুটা ভারসাম্য রেখে চলছিলেন। এ প্রসঙ্গে একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে টুইটারের ঘটনাটিকে। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে বলে ওয়াশিংটনে দাঙ্গা লাগিয়ে দেন ট্রাম্প। ওই ঘটনার জেরে তাকে ফেসবুক, টুইটার থেকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। ২০২২ সালে এসে টুইটার কিনে নেন ইলন মাস্ক। আর ওই বছরের শেষের দিকেই তিনি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দেন।
২০২৩ সাল নাগাদ ইলন মাস্ক একেবারেই রিপাবলিকান পার্টি থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেন। তিনি সমর্থন দিয়ে দেন রিপাবলিকান পার্টিকে। তবে শুরুতে ট্রাম্পকে নয়। তিনি সমর্থন দেওয়া শুরু করেন ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডেসান্টিসকে। তারা দু’জনে একত্রে টুইটারে লাইভস্ট্রিমেও আসেন। তখনও রিপাবলিকান পার্টি নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেনি। মাস্ক চেয়েছিলেন ডেসান্টিস ওই প্রার্থী হোক। মানে সরাসরি ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বীকেই সমর্থন দিচ্ছিলেন তিনি তখনও।
ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন
ট্রাম্পের প্রতি ইলন মাস্ক সমর্থন দেন ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ১৩ তারিখ। ওই দিনটিতে ট্রাম্প সমাবেশ করতে গিয়েছিলেন পেনসিলভানিয়ার বাটলার এলাকায়। সেখানে ট্রাম্পের ওপর গুলি চালানো হয়। সে গুলি তার কানের লতি স্পর্শ করে বের হয়ে যায়। ট্রাম্প ওই অবস্থাতেই মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় উঠে দাঁড়ান এবং সিকিউরিটি সার্ভিস নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থেকেই উচ্চারণ করেন – ‘ফাইট, ফাইট’।
গোটা বিষয়টি গণমাধ্যমের সুবাদে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। ট্রাম্পের এই দৃঢ়তা ভালো লেগে যায় ইলন মাস্কের এবং তিনি প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই নিজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করে সমর্থন দিয়ে দেন ট্রাম্পকে।
শুধু সমর্থন দিয়েই ক্ষান্ত হননি মাস্ক। দুই হাতে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের পেছনে অর্থ খরচ শুরু করেন। সিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের পেছনে ২৭৭ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন ইলন মাস্ক। ডলার রেট ১২০ টাকা করে ধরলে বাংলাদেশি টাকায় এটি দাঁড়ায় – দুই হাজার সাতশ ২৪ কোটি ডলার।
ট্রাম্পের মুখেও আবার ফিরে আসে ইলনের প্রশংসা। তিনি যেদিন নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় বিজয়ী হন, সেদিন রাতে ইলন প্রসঙ্গে ভাষণে বলেন, একটি তারকার জন্ম হয়েছে। সে সত্যিই একজন অসাধারণ মানুষ।
ওই দিনগুলোতে ট্রাম্পের সঙ্গে বিভিন্ন পরিকল্পনাতেও বসতে দেখা যায় ইলন মাস্ককে। ট্রাম্পের রিসোর্টে বেশ কয়দিন অবস্থানও করেন ইলন মাস্ক। গোটা বিষয়টিই কিন্তু নজিরবিহীন।
ট্রাম্প প্রশাসনে ইলন ও গণ্ডগোল
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রশাসনে যোগ দেন ইলন মাস্ক। একরকম নিজের প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে আসেন তিনি। ইলন সে সময় ঘোষণা দেন, মার্কিন সরকারের ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বাঁচিয়ে দিবেন তিনি। ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি নামের নতুন বিভাগ তৈরি করে সেটির দায়িত্ব দেওয়া হয় ইলন মাস্ককে। তিনি গণহারে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছাঁটাই করতে শুরু করেন। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই আইনি জটিলতা শুরু হয়ে যায়। ইলন মাস্কের অনেক ছাঁটাই উল্টে দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে সাময়িক নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়।
এদিকে, ইলন তখন ঘোরাফেরা করছিলেন ট্রাম্পের ‘খাস লোকদের’ সঙ্গে। কয়েকদিন পরেই বাইরে খবর আসতে শুরু করে যে ইলনের সঙ্গে খাস লোকদের সমস্যা শুরু হয়েছে। তবে এটিও জানা যায়, ট্রাম্পের সঙ্গে তখনও তার সম্পর্ক অটুট রয়েছে।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরু থেকেই সাংবাদিকরা জানতে আগ্রহী ছিলেন যে ইলন মাস্ক আসলে কতোদিন ট্রাম্পের প্রশাসনে থাকবেন। ট্রাম্প একাধিকবার সবাইকে আশ্বস্ত করেন যে ইলন মাস্ক কিছু দায়িত্ব পালন করেই আবার ফিরে যাবেন নিজের প্রতিষ্ঠানে। এ সময় ইলন মাস্ক ও ট্রাম্পের সম্পর্ক বেশ ভালো ছিল।
ট্রাম্প প্রশাসন থেকে ইলনের বিদায়
২০২৫ সালের মে মাসে এসে ইলন মাস্ক ট্রাম্প প্রশাসন থেকে বিদায় নেন। এর কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিষয়ক সাময়িকী পলিটিকোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সে প্রতিবেদনে বলা হয়, ইলন মাস্কের সঙ্গে ভেতরে অনেকেরই সমস্যা শুরু হয়ে গেছে এবং তিনি কোনো কিছুই করতে পারছেন না।
৩০ মে বিদায় নেন ইলন। ওই সময়ও ট্রাম্পের মুখে শোনা যায় ইলন মাস্কের প্রশংসা। তিনি বলেন, ‘ইলন আসলে চলে যাচ্ছে না। আমার মনে হয় সে প্রায়ই আসবে, যাবে।’ অন্যদিকে ইলন মাস্কও বলেন, তিনি প্রেসিডেন্টের বন্ধু ও উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা বজায় রাখবে।
মাস্ক ও ট্রাম্পের ঝগড়া প্রকাশ্যে
মাস্ক ও ট্রাম্পের বিবাদের মূলে রয়েছে একটি খসড়া বিল। ওই বিলের মধ্য দিয়ে অনেক কিছুই বদলে যাচ্ছে। একদম সহজ করে বললে- স্বাস্থ্যখাত থেকে শুরু করে অনেক কিছুর বাজেট কমানো হয়েছে সেটিতে। আবার অনেক কিছুর খরচ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ইলন মাস্ক এটি মেনে নিতে পারেননি। তিনি সরাসরিই এর বিরোধিতা করেন। অন্যদিকে ট্রাম্প বিলটিকে আখ্যা দেন ‘বিগ, বিউটিফুল বিল’ হিসেবে।
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে অপমান, পাল্টা অপমান চলতে থাকার এক পর্যায় ৫ জুন ট্রাম্প হুমকি দেন যে মাস্ক তার প্রতিষ্ঠানের জন্য যেসব সরকারি চুক্তি পেয়েছেন, সেগুলো বাতিল করে দিবেন তিনি। অন্যদিকে, মাস্ক বলেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার সমর্থন ছাড়া জিততেই পারতেন না।
মাস্ক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের উপরও নিজ প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট থাকার মেয়াদ ফুরিয়ে যাবে সাড়ে তিন বছরেই। কিন্তু আমি ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আশপাশেই থাকব।
এদিকে আবার ট্রাম্পও দাবি করেন যে ইলন মাস্ককে আসলে তিনিই প্রশাসন থেকে চলে যেতে বলেছিলেন। কারণ তিনি নতুন যে বাজেট বিল আনছেন তাতে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির কর মওকুফের সুযোগটা বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। আর এটি নিয়েই ইলন নাখোশ হয়ে উঠেছিলেন।
মাস্ক কিন্তু ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অনেক বড় একটি অভিযোগ এর মধ্যেই তুলেছেন। তিনি বলেছেন, যৌন ব্যবসা ও কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত জেফরি এপস্টিনের গ্রাহক তালিকায় নাম রয়েছে ট্রাম্পের। আর এ কারণেই না কি ওই তালিকা প্রকাশ করতে দিচ্ছেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এ ঘটনা যে আরও বহুদূর গড়াবে তা সহজেই অনুমেয়। তবে যা এরই মধ্য ঘটে গেছে, তা –ও কম নয়। আবারও বলতে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ধনকুবেরের মধ্যে এরকম পরিস্থিতি তৈরি হওয়াটা সত্যিই নজিরবিহীন।
আপনার যদি এ লেখাটা ভালো লেগে থাকে, তাহলে উইজ বাল্ব বুকমার্ক করে রাখুন। এরকম অভিনব ও নিত্যনতুন লেখা প্রায়ই পাবেন। আপাতত কষ্ট করে একটু ঢুঁ দিয়ে যেতে হবে সাইটে। চেষ্টা করছি নিউজলেটার অপশনও নিয়ে আসতে। সেটা চলে এলে সরাসরি আপনার মেইলেই চলে যাবে নতুন লেখা।