এআই মানুষের চাকরি

এআই যেসব চাকরি নিয়ে যাচ্ছে! (এবং যেগুলো নিতে পারছে না)

এতোদিন একটা কথা প্রায়ই শোনা যেতো যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই মানুষের চাকরি নিয়ে নেবে। বিল গেটস থেকে শুরু করে স্যাম অল্টম্যান, এমনকি এনভিডিয়ার প্রধান জেনসেন হুয়াংয়ের মতো ব্যক্তিরা বারবারই বলেছেন এআই নিয়ে যথেষ্ট দক্ষ হতে না পারলে, অনেকেরই ভবিষ্যতে চাকরি হারাতে হতে পারে। বিল গেটস তো সরাসরি বলেই দিয়েছেন যে মোটে তিনটি চাকরি টিকবে ভবিষ্যতে, বাদবাকি সব চলে যাবে এআইয়ের হাতে।

এতোদিন এসব কথাবার্তা হয়েছে অনেকটা আন্দাজের ভিত্তিতে। সরাসরি শক্তপোক্ত কোনো প্রমাণ ছিল না মানুষের হাতে। তবে এবার সে প্রমাণ চলে এসেছে। হ্যাঁ, আসলেও মানুষের চাকরির ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে এআই। বেশ কিছু চাকরি গায়েব হয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে। আগামীতে এ গতি আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এআই যে মানুষের চাকরিবাকরি নিয়ে যাচ্ছে, সে তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করেছে রেভেলিও ল্যাবস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি ইন্টারনেটে পোস্ট হওয়া বিভিন্ন চাকরির বাজার থেকে ডেটা সংগ্রহ করে এবং সেগুলোর ভিত্তিতে নিজেদের প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে।

এই রেভেলিও ল্যাবস বলছে, বেশ কিছু চাকরি কমতে শুরু করেছে এআই আসার পর থেকে। মূলত যেসব কাজ এআই দিয়ে করা যায়, সেগুলোই কমছে। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এ কমার গড় হার ছিল ১৯ শতাংশ। উধাও হয়ে যেতে থাকা চাকরি ও কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে – ডেটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, আইটি স্পেশালিস্ট, ইনফরমেশন সিকিউরিটি ও ডেটা ইঞ্জিনিয়ার। অন্যদিকে বেশ কিছু চাকরি ও কাজ এমনও রয়েছে যেগুলো এআই আসার পরও বহাল তবিয়তে আছে। এগুলোর নিকট ভবিষ্যতে তেমন কোনো হুমকি নেই। সেগুলো হলো – রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার, ফোরম্যান, মেকানিক, কর্পোরেট ট্রেনার, ক্রু মেম্বার ইত্যাদি।

বিভ্রান্তি দূর করার জন্য একটি বিষয় বলে রাখা ভালো যে এর আগেও এ ধরনের গবেষণা হয়েছে। ২০২৩ সালে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি ও নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির একদল গবেষকও চাকরি কমার ডেটা দেখেছেন। তবে সেবার সেটি ছিল খুবই অল্প। গড়ে সাকুল্যে ২ থেকে ৫ শতাংশ। সেদিক থেকে বিচার করলে- ২ বছরের মাথাতেই এ হার বেড়ে হয়েছে ১৯ শতাংশ।

এবার আসুন দেখি রেভেলিও ল্যাবসের ডেটা কী বলছে? কোন চাকরি কতোটা ঝুঁকিতে আছে? আর যেসব চাকরির ঝুঁকি কম, সেগুলোই বা কত কম?

রেভেলিও ল্যাবস বলছে- ডেটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের কাজের ৬৯ শতাংশ এআই করতে পারে, আইটি স্পেশালিস্টের চাকরিরও ৬২ দশমিক চার শতাংশ এআই দিয়ে করে ফেলা যায়, ইনফরমেশন সিকিউরিটি এআই দিয়েই ৬১ দশমিক আট শতাংশ করে ফেলা সম্ভব। আর ডেটা ইঞ্জিনিয়ারের চাকরির ৫৯ দশমিক চার শতাংশ এআই সামাল দিতে পারে।

অন্যদিকে যে চাকরিগুলো কম ঝুঁকিতে আছে, সেগুলোর দিকে একটু দেখি। রেস্টুরেন্ট ম্যানেজারের চাকরির মাত্র ১৫ দশমিক ছয় শতাংশ এখন পর্যন্ত এআই করতে পারে, ক্রু মেম্বার হিসেবে এআই ব্যবহার করলে মাত্র ১৭ দশমিক ১ শতাংশ সাপোর্ট পাওয়া যায়, ফোরম্যানের চাকরির মাত্র ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ এআই করতে পারে। কর্পোরেট ট্রেনারের চাকরিও এআই ঠিকঠাকভাবে করতে পারে মাত্র ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে মেকানিকের কাজকর্ম এআই ২০ দশমিক ১ শতাংশ পর্যন্ত সামাল দিতে পারে।

বিজনেস ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শপিফাই ও ডুয়োলিঙ্গোর মতো কোম্পানিগুলো ক্রমাগত এআই যোগ করছে নিজেদের সেবায়। তারা কর্মী ছেঁটে এআইয়ের হাতে সব কাজ তুলে দেওয়ার পক্ষে। বিষয়টি দুই দিকে মোড় নিতে পারে। এক. এআই তাদের প্রতিষ্ঠানের খরচ কমিয়ে দিবে এবং তারা এআইয়ের দিকেই চলে যাবে। আর দুই. এটি করতে গিয়ে তারা দেখবে এআইয়ের দিকে যাওয়া ভুল ছিল এবং তারা আবার আগের অবস্থায় ফেরত আসবে এবং মানুষ চাকরি ফেরত পাবে। তখন একটা হাইব্রিড পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে ফিনটেক প্রতিষ্ঠান ক্লারনার উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। তারা ব্যাপক উৎসাহে এআই যোগ করা শুরু করেছিল নিজেদের প্রতিষ্ঠানে। এক পর্যায়ে তারা বলেছিল, ৭০০ পূর্ণকালীন এজেন্টের দায়িত্ব এআই সামাল দিচ্ছে। এরপর কিছুটা সময় পার হলো। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেখা গেলো, তারা আবার মানুষ নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছে। এআই দিয়ে সেভাবে কাজ হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়ার পর তারা জানিয়েছে, এআই নেওয়ার পর কাজের মান কমে গিয়েছিল! মানে এআই এখনও ততোটা প্রস্তত নয়।

তবে একটা ভয় এখনও আছে। ক্লারনার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে যে এআই ভালোভাবে প্রস্তত হয়ে গেলে তারা আরও দ্রুতগতিতে মানব কর্মীর সংখ্যা কমাতে পারবে। অনেকে এমনও মনে করছেন যে হয়তো ১২ মাসের মধ্যেই ওই পর্যায়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

আপনার যদি এ লেখাটা ভালো লেগে থাকে, তাহলে উইজ বাল্ব বুকমার্ক করে রাখুন। এরকম অভিনব ও নিত্যনতুন লেখা প্রায়ই পাবেন। আপাতত কষ্ট করে একটু ঢুঁ দিয়ে যেতে হবে সাইটে। চেষ্টা করছি নিউজলেটার অপশনও নিয়ে আসতে। সেটা চলে এলে সরাসরি আপনার মেইলেই চলে যাবে নতুন লেখা।