লক্ষ্য

যেভাবে সহজেই অর্জন করতে পারবেন ‘লক্ষ্য’

কোনো কিছু নিয়ে চেষ্টা করা, ব্যর্থ হওয়া ও হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো ঘটনা আমাদের আশপাশে প্রায়ই দেখা যায়। নিচে তিনটা ঘটনা বলছি। ঘটনাগুলোর পরে তুলে ধরবো সমাধানের পথ। আপনাকে সহজে লক্ষ্য অর্জনের ছোট্ট একটা পথ বাতলে দিব আজকে।

ঘটনা ১

“ভাই আমি দুপুরে একদমই খাই না। সকালে নাস্তা করি। আর গিয়ে রাতে খাই। তারপরও এই ওজন কমে না। এখন চলতে ফিরতে কষ্ট হয়।”— কথাগুলো বলছিলেন কামাল সাহেব।

অনেকদিন ধরেই ওজন কমাতে চাইছেন তিনি। হুট করে তার ওজন বেড়ে হয়ে গেছে ৯৮। উচ্চতার সঙ্গে ওজনের বিচারে তাকে এখন স্থুলকায় বলা যায়। কিন্তু ওজন কিছুটা কমাতে পারলেই উচ্চতা ও ওজনে সামঞ্জস্য চলে আসবে। শরীরও হয়ে উঠবে অনেক ঝড়ঝড়া। কামাল সাহেব বিষয়টা জানেন, তিনি বেশ কয়েকবার খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু ওই যে বললেন- কাজ হচ্ছে না।

এদিকে আবার চাকরি-বাকরির কারণে তার পক্ষে নিয়মিত ব্যায়াম করে বা জিমে গিয়ে ঘাম ঝড়িয়েও শুকানো সম্ভব না। তাহলে উপায়?

ঘটনা ২

রাতুল অনেকদিন ধরেই নতুন কিছু শিখতে চাইছে। সে বুঝে গেছে প্রতিযোগিতার এ দুনিয়ায় নতুন স্কিল শেখার বিকল্প নেই। নিজে নিজে একটা বিষয়ও ঠিক করেছে – কোডিং। ভেবেছে পাইথন দিয়ে শুরু করবে। হাতের কাছে রিসোর্সেরও অভাব নেই। ইউটিউবে হাজার হাজার ভিডিও টিউটোরিয়াল আছে। একটু কষ্ট করলেই সেগুলো দিয়ে মৌলিক বিষয়গুলো শিখে নেওয়া সম্ভব।

সমস্যা হলো, বেশ কয়েকবার কম্পিউটারের সামনে বসে এরকম ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখেও সে সুবিধা করতে পারেনি। প্রতিবারই দেখা যায়, কয়েকদিন পরেই হাল ছেড়ে দিচ্ছে সে। ফলে দিনশেষে আর শেখা হয়ে উঠেনি তার।

ঘটনা ৩

সুমি ফেসবুকে একটা অনলাইন শপ চালায়। তার বিক্রি এখন পড়তির দিকে। নিজের বিচারবুদ্ধিতে সে এটুকু বুঝতে পারছে যে কোনোভাবে যদি সোশাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের দিকটা আত্মস্থ করে নেওয়া যায়, তাহলেই বিক্রি বাড়ানো সম্ভব। ফেসবুক এ সংক্রান্ত সব তথ্য ফ্রিতেই দিয়ে রেখেছে। কিন্তু সে-ও ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিবারই দেখা গেছে আহামরি কোনো কিছু না শিখেই ফিরতে হয়েছে তার, এখন হালই ছেড়ে দিয়েছে সে। ভেবেই নিয়েছে যে তাকে দিয়ে এটি আর হবে না। মাঝেমধ্যে ব্যবসাটাও ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবে সে।

 

এদের তিনজনের ক্ষেত্রেই একটা দিকে মিল রয়েছে, আর তা হলো – সমস্যার সমাধান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তারা। কিন্তু সে সমাধানটা তারা নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারছেন না। এই জিনিসটা ঘুরেফিরে আমাদের সবার সঙ্গেই হয়। এটা কেন হয়?

এর উত্তরটা আসলে খুব সহজ। এটি হয় – যথাযথ সিস্টেম বা পদ্ধতি অনুসরণ না করে কাজ করার জন্য। একটু সময় দিন, পুরোটাই খোলাসা করছি।

সিস্টেম তৈরি করে নিন

যে কোনো সমস্যার সমাধান সামান্য একটা সিস্টেম তৈরি করে নিলেই করা সম্ভব। আর আপাত দৃষ্টিতে যেটিকে সমাধান বলে মনে হচ্ছে, সেটিও আদৌ সত্যিকার অর্থেই সমস্যার সমাধান করবে কি না তা-ও ঝালিয়ে নেওয়া সম্ভব।

কীভাবে করব?

নিজের জন্য এই সিস্টেম তৈরি করা কিন্তু বেশ সহজ। মাত্র ৫ ধাপেই তৈরি করে নেওয়া যায়। কোনো টাকাপয়সার প্রয়োজন নেই।

এই পাঁচটা ধাপ হলো – সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা, যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ, লক্ষ্য নির্ধারণ, লক্ষ্য অর্জনের জন্য ছোট ছোট চেকপয়েন্ট নির্ধারণ, মোটিভেশন ও উৎসাহকে কাজে লাগানো।

প্রতিটা পয়েন্ট একটা একটা করে ব্যাখ্যা করি। আপনার কাছে বিষয়টা আরও খোলাসা হবে-

সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা

কামাল সাহেবের উদাহরণটাই ধরুন। তার সমস্যা বাড়তি ওজন। সমাধান ওজন কমানো। এ পর্যন্ত তিনি খুব ভালোভাবে জানেন। কিন্তু বাকিটুকু তিনি আর জানেন না। তার ওজন আসলে কতোটা বেশি, কতোটা কমাতে হবে, কীভাবে কমালে ভালো হবে – এ সম্পর্কে তার আইডিয়া নেই বললেই চলে।

কেউ হয়তো কখনও তাকে বলেছে- কম খাও, সে ওভাবেই শুরু করে দিয়েছে। আদৌ কাজ হবে কি না, তা তার জানা নেই। ফলে যখন তার কাজ হচ্ছে না। তখন সে হয়ে পড়ছে হতাশ।

এখান তার প্রথম কাজটা হলো সমস্যা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেওয়া এবং সমাধানের বিষয়টাও ভালোভাবে খতিয়ে দেখা (যদি সত্যিই সে ওজন কমাতে চায়, সেক্ষেত্রে এটাই যৌক্তিক)।

এখানে তার খুঁজে বের করতে হবে কেন তার ওজন বেড়ে গেছে। হুট করে ওজন বৃদ্ধির পেছনে তো কোনো না কোনো কারণ অবশ্যই আছে। তিনি কী খাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছিলেন? কোনো স্বাস্থ্যগত কারণ বা ওষুধ খাওয়ার জন্য ওজন বেড়েছে? না কি অন্য কিছু?

এসব উত্তরের ওপর নির্ধারণ করবে তার সমাধানের পথ। শুধু ‘ওজন বেড়েছে’ – এরকম ধারণা থাকাটাকে স্পষ্ট কিছু বলা যায় না। এটা স্পষ্টভাবে জানাটা হলো তার প্রথম কাজ।

ধরুন- তিনি স্পষ্ট উত্তর খুঁজতে গিয়ে পেলেন যে মাঝের কয়েক বছর খাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, এজন্যই তার ওজন বেড়েছে। এখন এর সমাধান কী হবে? আপনি এখন বলবেন, আরে এটা তো সহজ। খাওয়া কমালেই ওজন কমে যাবে।

আপনার জন্য বলছি, না ভাই। সমাধান এতো সহজ না। এখানে অনেক ‘যদি’ ও ‘কিন্তু’ আছে। এই পর্যায়ে তাকে সমাধান সম্পর্কে ভালো ভাবে জানতে হবে। কোন পথটা তার জন্য যথাযথ সেটি বুঝতে হবে। তারপর ওই সমাধান নিয়ে এগোতে হবে।

তাকে প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে – ওজন ঠিক কতোটা বেড়েছে, কতোটা কমাতে হবে। তারপর একটা সময় নির্ধারণ করতে হবে যে এই সময়ের মধ্যে আমি ওজন কমাবো। এরপর হিসাব কষে দেখতে হবে যে ওই সময়ের মধ্যে আদৌ ওজন কমানো সম্ভব কি না।

ধরেন, তিনি চিন্তা করলেন এক সপ্তাহে ১০ কেজি কমাবেন। সেটি কী আদৌ সম্ভব! যদি সম্ভবও হয়, তাহলেও কী তিনি সুস্থ্য থাকবেন?

এ কারণেই ঠাণ্ডা মাথায় তাকে একটি সমাধানের দিকে আসতে হবে। এরপর শুরু হয়ে যাবে দ্বিতীয় ধাপ। আর তা হলো – সমাধান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ।

বলে রাখা ভালো – এই একই পথ কিন্তু রাতুল ও সুমির ক্ষেত্রেও কাজে দিবে। রাতুলকে বুঝতে হবে কেন তার স্কিলটা শেখা দরকার। তার কী আরও টাকার দরকার না কি শুধু শেখার জন্য শেখা – সেটি নির্ধারণ করতে হবে। সে কেন টিউটোরিয়ালে মনোযোগ রাখতে পারছে না, সেটি নিয়েও ভাবতে হবে। সমস্যা কী যিনি শেখাচ্ছেন, তার? না কি রাতুলের?

অন্যদিকে সুমির চিন্তা করতে হবে – শুধু সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং দিয়ে তার সমস্যার সমাধান করা সম্ভব কি না, এমনও তো হতে পারে অন্য কোনো কারণে ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। যদি এটিই একমাত্র সমাধান হয়, তা হলে কোন দিকটা তার লাগবে – শুধু কী পণ্যের প্রচারেই হবে না কি তার আলাদা একটা ওয়েবসাইটও লাগবে? মোদ্দা কথা, সমস্যা ও সমাধানের পথ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ও বোঝাপড়া থাকতে হবে।

সমাধান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও লক্ষ্য নির্ধারণ

এ পর্যায়ে আপনি সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন। সেগুলো নিয়ে আর চিন্তাভাবনা করার দরকার নেই। আপনি সমাধানের পথ নির্ধারণ করে ফেলেছেন। এখন প্রয়োজন তথ্য সংগ্রহ এবং লক্ষ্য নির্ধারণ করা। এই দুটি ধাপ একটি আরেকটির সঙ্গে জড়িত। প্রথমটি হলে, দ্বিতীয়টি অনেকটা এমনিতেই হয়ে যাবে।

আবারও উদাহরণে ফেরত যাই। কামাল সাহেব জানেন যে খাওয়া কমিয়েই তার ওজন কমাতে হবে, কারণ আর কোনো পথ খোলা নেই। অফিসের কারণে জিমে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব না। এটি তিনি আগেও জানতেন, কিন্তু এখন তিনি বাড়তি কিছু বিষয় জানেন। যেমন, ওজন কতোটা বেশি আছে, কতদিন ধরে কমাবেন ইত্যাদি।

এখন তাকে খুঁজে বের করতে হবে খাওয়া ঠিক কতোটা কমালে শরীর দুর্বল হবে না, কিন্তু ওজন ঠিকই কমবে। সামান্য একটু গুগল সার্চ করে তিনি জেনে গেলেন যে শরীরের একটা হিসাব আছে –  একজন মানুষের যে ওজন থাকে, তা বজায় থাকার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার তাকে খেতে হয়। ওই পরিমাণের কম খেলে ওজন কমবে, আর বেশি খেলে বাড়বে। তিনি নিজের ওজন দিয়ে হিসেব করে দেখলেন যে- তার এখন যে ওজন সেটি এ জায়গায় স্থির রাখতে তার প্রতিদিন ২৫০০ ক্যালরি প্রয়োজন। তাহলে ওজন কমাতে হলে তার এই ক্যালরির মাত্রা থেকে কম খেতে হবে।

আরেকটু ঘেঁটে তিনি জানতে পারলেন যে যদি কেউ ১৫০০ ক্যালরির নিচে খায়, তাহলে তার শরীর দুর্বল হয়ে যায়। এখন তিনি একটা মার্জিন পেয়ে গেলেন যে- তাকে ২৫০০ থেকে ১৫০০ এর মধ্যে খেতে হবে।

তিনি ঠিক করে নিলেন যে দৈনিক ২০০০ ক্যালরি খাবেন তিনি। তাহলে ৫০০-এর ঘাটতি তৈরি হবে। এভাবে প্রতি ৭ দিনে ৪৫০ গ্রাম করে কমবে. এক মাসে কমবে প্রায় দুই থেকে আড়াই কেজি। এভাবে ছয় মাস চালিয়ে গেলে শরীরকে কষ্ট না দিয়ে, ওজনটা আয়ত্তে নিয়ে আসতে পারবেন তিনি।

তাহলে একদিকে তিনি সমাধান সম্পর্কে তথ্য পেলেন এবং এর পরপরই একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে ফেললেন।

উদাহরণ থেকে বের হয়ে আসি। এই যে সমাধান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ – এটি আপনার কাজকে আরও গতিশীল করবে। এভাবে আপনি একটা ছন্দ খুঁজে পাবেন। এই ধাপটা আপনাকে সহায়তা করবে আপনার মতো করে সমাধান নিয়ে এগোতে দিতে।

রাতুলের ক্ষেত্রে কী হবে? ধরুন সে সমাধান হিসেবে বেছে নিয়েছে – টিউটোরিয়ালে মনোযোগ দেওয়া, সে খুঁজে পেয়েছে যে – টিউটোরিয়াল যারা বানিয়েছে, তারা অহেতুক অনেক কথা বলেছে, কাজের জিনিস শেখাচ্ছে না।

এক্ষেত্রে রাতুলকে যেটা করতে হবে, সেটা হলো – ৭টা দিন ব্যয় করে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখতে হবে। না, শেখার জন্য না। কে ভালোভাবে বিষয়টি বুঝাতে পারছে বা কার উপস্থাপনা তার ভালো লাগছে, সেটি বের করার জন্য। এরপর সে মনোযোগ শেখার দিকে। কতদিনে সে শিখতে চায়, সেটিও তার বুঝতে হবে। সেটির ওপরও নির্ভর করবে কোন টিউটোরিয়াল সে অনুসরণ করবে, সে বিষয়টি।

এবার আসি সুমির সমস্যায়। সুমি হয়তো খুঁজে পেয়েছে যে তার সমস্যা আসলে একটি না, তিনটি। এক. তার পণ্যের কোয়ালিটিতে কিছুটা ঝামেলা আছে। দুই. ফেসবুকের রিচ কমে গেছে। একটা ওয়েবসাইট হলে ভালো হয়। তিন. ইংরেজি পড়ে তার ফেসবুকের ফ্রি মার্কেটিং রিসোর্স বুঝতে কষ্ট হয়।

তাই সমাধান হিসেবে সে ঠিক করেছে – পণ্যের মান উন্নত করবে, ওয়েবসাইট বানাবে অল্প খরচে, আর বাংলায় পুরোটা শেখা যায় কি না, সেটা চেষ্টা করবে। সে কী করলো – তিন বিষয়েই খোঁজ নিলো। ভালো একজন সরবরাহকারী খুঁজে বের করলো, অল্প খরচে একজনকে ওয়েবসাইট তৈরির কাজ দিয়ে দিলো, আর নিজে ভর্তি হয়ে গেলো একটা অনলাইন কোর্সে, যেখানে খুব সহজভাবে বাংলায় সোশাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

এখানেও কিন্তু সমাধান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ হলো এবং একটি লক্ষ্য নির্ধারিত হয়ে গেলো।

তিনজনের ক্ষেত্রেই এ পর্যায় থেকে শুরু হয়ে যাবে সিস্টেমের চতুর্থ ধাপ। আর তা হলো- লক্ষ্য অর্জনের জন্য ছোট ছোট চেকপয়েন্ট নির্ধারণ।

লক্ষ্য অর্জনের জন্য ছোট ছোট চেকপয়েন্ট নির্ধারণ

আমি যদি এখন আপনাকে বলি আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠেই সরাসরি বিছানা থেকে লাফ দিয়ে ১০ কিলোমিটার দূরের কোনো স্থানে চলে যাবেন, তাহলে সেটি কী বাস্তবসম্মত হবে? অবশ্যই তা বাস্তবসম্মত হবে না।

বাস্তবসম্মত হবে- যদি আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে, রেডি হয়ে, বাসস্ট্যান্ডে এসে, বাসে চড়ে ওই ১০ কিলোমিটার দূরের ওই জায়গায় পৌঁছান। একটু খেয়াল করে দেখুন যে আমি এখানে কয়টা কাজের কথা বলেছি – ১. ঘুম থেকে উঠা, ২. ফ্রেশ হওয়া, ৩. রেডি হওয়া, ৪. বাসস্ট্যান্ডে আসা, ৫. বাসে চড়া, ৬. সঠিক স্থানে পৌঁছানো। অর্থ্যাৎ, মোটাদাগে কাজ একটি হলেও মোট ছয়টি কাজ আছে এখানে।

আমরা আসলে প্রতিদিন অবচেতন মনেই এভাবে ছোট ছোট পদক্ষেপে দৈনন্দিন কাজ করি, খেয়ালও করি না যে এগুলো আমরা করছি। সমস্যা বাঁধে তখন, যখন আমরা বড় কাজে হাত দেই। আমরা একেবারে পুরোটা করতে যাই। ফলে কিছুটা দূর যাওয়ার পর হতাশ হয়ে যাই আমরা।

এটার জন্য কোনো লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করার সময় ছোট ছোট চেকপয়েন্ট নির্ধারণ করা জরুরি। এতে করে আপনি নিজেই মনকে প্রবোধ দিতে পারবেন – এই তো চলে এসেছি, আর একটু।

কামাল সাহেবের ক্ষেত্রে ছোট ছোট চেকপয়েন্ট হতে পারে প্রতি মাসে আড়াই কেজি করে কমানো। যেভাবেই হোক আড়াই কেজি তার কমাতেই হবে। এতে যা হবে – এক মাস শেষে গিয়ে দেখা যাবে তিনি সাফল্যের একটা স্বাদ পাবেন। এটি তাকে সামনে যেতে সহায়তা করবে। কোনো কারণে যদি মাস শেষে কাঁটায় কাঁটায় আড়াই কেজি না-ও কমে, তাহলেও তিনি সমস্যাটা খুঁজে বের করতে পারবেন।

অন্যদিকে তিনি যদি ছয় মাস পরের অপেক্ষায় থাকেন, তাহলে একটা সময় তাকে অবসাদ পেয়ে বসতে পারে। লক্ষ্য অনেক দূরের বলে মনে হতে পারে এবং মাস দুয়েকের মধ্যে তিনি হালও ছেড়ে দিতে পারেন।

রাতুলের ক্ষেত্রেও তাই। সে টপিক নির্ধারণ করে নিতে পারে, যে এই মাসে এতটুকু গেলেই মনে করবো – আমি সফল। সুমির ক্ষেত্রেও একই কথা খাটবে। সে-ও ছোট ছোট বিজ্ঞাপন চালিয়ে নিজেকে ঝালাই করে নিতে পারে। একবারেই বড় মাপের অর্ডার পাওয়ার দরকার নেই। অল্প বাজেটে, ছোট ক্যাম্পেইন, ২/৩ জন ক্রেতা আসলেই হবে।

মানে নিজের বিদ্যাটা কার্যকরী হচ্ছে কি না তা ঝালাই করে নেওয়ার সুযোগ মিলছে, ধরে রাখার মানসিকতা তৈরি হচ্ছে এবং আত্মবিশ্বাসও তৈরি হচ্ছে এ ধাপের মধ্য দিয়ে।

এটিই কী তাহলে সব? না, আরেকটি ধাপ আছে। যেটি আপনাকে দিনশেষে পৌঁছে দিবে বিজয়ের দুয়ারে।

উৎসাহকে কাজে লাগানো

আপনাকে ক্রমাগত নিজেকে মোটিভেট করতে হবে। উৎসাহকে জাগিয়ে তুলতে হবে এবং জাগিয়ে রাখতে হবে। আপনার মতো আরও বহু মানুষ একই ধরনের জার্নির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাদের গল্পগুলো খুঁতে অনুপ্রেরণা নিতে পারেন।

আবার অনেক ধরনের মোটিভেশনাল ভিডিও আছে, সেগুলো দেখতে পারেন। এক কথায় – সে সবই করবেন, যা আপনার উৎসাহের আগুনকে নিভতে দেবে না।

আর ভালো কথা, এটি কিন্তু নিয়ম করে করতে হবে। বিষয়টা কিন্তু এমন না যে আপনি আজকে করলেন, এর পরে প্রচুর উৎসাহ নিয়ে ঘুমাতে গেলেন, আর কোনোদিন করলেন না। এরকমটি করলে উৎসাহ টিকবে না। প্রতিদিন কিছুটা সময় রাখুন এগুলোর জন্যও। আধা ঘণ্টা হলেও এ কাজে ব্যয় করুন। কিছু দেখুন, পড়ুন।

এমনকি প্রতিদিন কী কী করেছেন তা-ও লিখে রাখতে পারেন নিজের মোবাইলের নোট অ্যাপে। সাতদিন পরে পেছনের লেখাগুলো দেখলে একধরনের সাহস পাবেন। সেটিও আপনাকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। পছন্দের উদ্ধৃতিগুলোও টুকে রাখতে পারেন। যা-ই হয়ে যাক, উৎসাহে ভাটা পড়তে দেওয়া যাবে না।

এই যে আমি জিনিসগুলো বললাম, আপনি যদি শুধু এভাবে নিজের লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করেন, তাহলেই দেখবেন আপনার কাজ অনেক সহজ হয়ে যাচ্ছে।

তো…অনেকভাবে তো চেষ্টা করলেন… এবার নাহয় এভাবে একবার চেষ্টা করে দেখুন… কাজ হয় কি না! আপনাকে এবার একটি ব্যক্তিগত তথ্য দেই –  এই যে সাইটটাতে আপনি লেখাটা পড়ছেন, এটিও কিন্তু এভাবেই বানানো। ওই একই পথ অনুসরণ করে ধাপে ধাপে এটি বাস্তবে রূপ নিয়েছে। আপনার সামনেই দিলাম বাস্তব প্রমাণ। এখন এ পথে হাঁটবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত আপনার।

আপনার যদি এ লেখাটা ভালো লেগে থাকে, তাহলে উইজ বাল্ব বুকমার্ক করে রাখুন। এরকম অভিনব ও নিত্যনতুন লেখা প্রায়ই পাবেন। আপাতত কষ্ট করে একটু ঢুঁ দিয়ে যেতে হবে সাইটে। চেষ্টা করছি নিউজলেটার অপশনও নিয়ে আসতে। সেটা চলে এলে সরাসরি আপনার মেইলেই চলে যাবে নতুন লেখা।