আপনি কী ইন্টারনেটে আসক্ত?
যদি হয়ে থাকেন তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য।
আর যদি না হয়ে থাকেন,
তাহলেও এই লেখাটি আপনার জন্য….
বৈশ্বিক এক জরিপ বলছে, আমরা প্রতিদিন সবাই গড়ে অন্তত সাড়ে ছয় ঘণ্টা ব্যয় করি স্ক্রিনটাইমের পেছনে।
না করে উপায়ও নেই, আমাদের পড়ালেখা, চাকরি, বিনোদন সবই হয়ে উঠেছে ডিভাইস কেন্দ্রিক।
সমস্যাটা হয় তখন, যখন আমরা ডিভাইস থেকে একেবারেই চোখ সরাতে পারি না।
বিশ্বে অনেকেই আছেন যারা সারাদিনের নাওয়া-খাওয়া ভুলে একটানা তাকিয়ে থাকেন স্ক্রিনের দিকে। এতে করে তাদের পড়ালেখা, চাকরি ইত্যাদির যে ক্ষতি হয়, তারা সেটি বুঝতেও পারেন। কিন্তু নিজের যে স্ক্রিনের পেছনে সময় দেওয়া, সেটিকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। আর এ বিষয়টিই মোটাদাগে ইন্টারনেট আসক্তি। অন্যান্য আসক্তির মতো এরও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। যেমন-
অনেক ব্যক্তি আছেন, যারা ডিজিটাল ডিভাইসের স্ক্রিনের সামনে থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলে নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হন। রীতিমতো তার হাত-পা ব্যথা করতে থাকে, মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে? আসুন এ বিষয়ে বাস্তব জীবনের দুটি ঘটনা জেনে নেওয়া যাক। যুক্তরাজ্যের স্বনামধন্য দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত হয়েছে সে ঘটনাগুলো।
ঘটনা ১
হ্যারিয়েট নামের ৪৩ বছর বয়সী এক নারী কাজ করেন হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রিতে। কিন্তু তিনি প্রায়ই কাজে যান না। সে সময়টা ব্যয় করেন স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে, পছন্দের টিভি শো বা মুভি দেখে। কোনোভাবেই তিনি নিজেকে ওই স্ক্রিনের সামনে থেকে সরাতে পারতেন না।
এরকম করতে করতে একসময় হ্যারিয়েটের চাকরিটা চলে গেল। তাকে অল্প বেতনে কম সম্মানজনক একটা পেশায় চলে আসতে হল।
যেবার হ্যারিয়েটের চাকরি চলে যায়, সেবার তিনি ১১ দিন ধরে তাকিয়ে ছিলেন স্ক্রিনের দিকে! তেমন কিছু না, একটার পর একটা খালি ইউটিউব ভিডিও দেখেছেন।
হ্যারিয়েট কিন্তু সবসময় এমন ছিলেন না। সমস্যাটা শুরু হয় ছোট বেলায়। তিনি যখন কোনো কিছু নিয়ে চাপ অনুভব করতেন বা স্বস্তি পেতে চাইতেন, তখন তিনি লম্বা সময় টিভি দেখতেন। সব ভুলে থাকতে চাইতেন।
বড় হওয়ার পরেও ওই অভ্যাসটি ধরে রেখেছিলেন। নিজের চাকরির চ্যালেঞ্জগুলো সামনে আসলেই বা অন্য কোনো চাপের পরিস্থিতি তৈরি হলেই তিনি স্বস্তি খুঁজতেন ওই স্ক্রিনের সামনে।
একটা পর্যায়ে এটা এমন হয়ে গিয়েছিল যে, তিনি হয়তো বুঝতে পারছেন তার শরীর ক্লান্তিতে ভেঙে আসছে, অসাড় আসছে, চোখ ব্যথা করছে। কিন্তু তিনি কিছুতেই দেখা থামাতে পারতেন না।
ঘটনা ২
নাম: টোবি। বর্তমানে তিনি পেশায় একজন উদ্যোক্তা। এখন সব ঠিকঠাক। কিন্তু একটা সময় ছিল, যখন তিনিও স্ক্রিনের দিক থেকে চোখ সরাতে পারতেন না।
তার ক্ষেত্রে জিনিসটা ছিল গেইম খেলার নেশা। এমনও হয়েছে যে ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা তিনি গেইম খেলেছেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ দিয়েছেন। কারো সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। একবার তো এভাবে গেইম খেলে ক্লাসে গিয়ে অজ্ঞানও হয়ে গিয়েছিলেন।
টোবি জানিয়েছেন, তিনি বুঝতে পারতেন যে এটি খারাপ হচ্ছে, কিন্তু নিজেকে থামাতে পারতেন না। কখনও চেষ্টা করলে হাত ও পায়ে ব্যথা হতো। মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত অনুভব করতেন।
বিচ্ছিন্ন ঘটনা?
এখন আপনি প্রশ্ন তুলতেই পারেন, যে এগুলো তো বিচ্ছিন্ন ঘটনাও হতে পারে। কিন্তু না। দেখা গেছে, এরকম অনেক মানুষ সমস্যায় ভুগছেন। একেক জনের ক্ষেত্রে সমস্যাটা একেক রকম।
এদেরকে নিয়ে কাজ করে এরকম একটা সাপোর্ট গ্রুপ আছে। নাম – ইন্টারনেট অ্যান্ড টেকনোলজি অ্যাডিক্টস অ্যানোনিমাস। তারা বলছে, দীর্ঘ সময় সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করা, স্মার্টফোন স্ক্রল করা, অনলাইন শপে ঘুরে বেড়ানো, পর্ন দেখা, সংবাদ পড়া, অডিও-ভিডিও কন্টেন্ট দেখা – সব কিছুই ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তি আসক্তির আওতার মধ্যে পড়ে।
ব্যাপারটা হচ্ছে আপনি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছেন কি না, সেটি।
পরিস্থিতি আসলে কতোটা খারাপ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও ইন্টারনেট আসক্তিকে কোনো রোগ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার মোট জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের এক ভাগ এখন ইন্টারনেট আসক্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। যুক্তরাজ্যে ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের প্রায় ৫৯ শতাংশ জানিয়েছে, যখন তারা ইন্টারনেট কানেকশনের বাইরে থাকেন, তখন তারা কী করবেন – বুঝতে পারেন না।
বিশ্বে শুধু চীন একমাত্র রাষ্ট্র, যাদের ইন্টারনেট অ্যাডিকশনের জন্য ক্লিনিক আছে।
শেষ কথা
আমি শুরুতে বলেছিলাম, আপনি যদি ইন্টারনেট আসক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য। কারণ তাহলে আপনি হয়তো বুঝতে পারবেন আপনি একা নন, আরও অনেকেই আছেন, যারা ভুগছেন। এবং এটা একটা ভয়াবহ সমস্যা। আপনি যদি এ নিয়ে ভুগতে থাকেন, তাহলে কিছু করা দরকার এ ব্যাপারে।
আমি এটাও বলেছিলাম যে আপনি যদি ইন্টারনেটে আসক্ত না-ও হন, তাও এই লেখা আপনার জন্য। সেটা বলেছিলাম এই জন্য যে, আমাদের সবারই আসলে এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। সময় থাকতে লাগাম টানা খুব জরুরি।
আপনার যদি এ লেখাটা ভালো লেগে থাকে, তাহলে উইজ বাল্ব বুকমার্ক করে রাখুন। এরকম অভিনব ও নিত্যনতুন লেখা প্রায়ই পাবেন। আপাতত কষ্ট করে একটু ঢুঁ দিয়ে যেতে হবে সাইটে। চেষ্টা করছি নিউজলেটার অপশনও নিয়ে আসতে। সেটা চলে এলে সরাসরি আপনার মেইলেই চলে যাবে নতুন লেখা।